চিত্রানদী
এক সময়ের স্রোতাস্বিনী চিত্রানদী এখন পানিশূন্য হয়ে কালের আবর্তে হারিয়ে যেতে বসেছে। এক সময় যে নদীর বুকে চলত লঞ্চ, স্টিমার, বড় বড় মালবাহী নৌকা, পালতোলা বজরা গ্রীষ্মের মওসুমে সেই নদীর অনেক স্থানে এক হাঁটু পানি থাকে না। একদিন চিত্রানদীর কুলকুল ধ্বনি মাঝি-মাল্লা আর নাবিকদের প্রাণ কেড়ে নিত। এখন তা শুধু অতীত ইতিহাস। এতিহ্যবাহী চিত্রানদী পাড়ে জন্ম নিয়েছেন বিশ্ববিখ্যাত চিত্রশিল্পী এসএম সুলতান। সাহিত্যিক নিমাই ভট্টাচার্য, কবিয়াল বিজয় সরকার ও শহীদ সাংবাদিক সিরাজ উদ্দিন হোসেন। এ নদীকে নিয়ে নির্মিত হয়েছে চিত্রানদীর পাড়ের মত বিখ্যাত সিনেমা। লেখা হয়েছে গল্প আর উপন্যাস। গল্প-উপন্যাসের সেই চিত্রানদী এখন মরা খাল।
চিত্রানদীর উৎপত্তি চূয়াডাঙ্গা জেলার মাথাভাঙ্গা নদী থেকে। সেখান থেকে চিত্রানদী ঝিনাইদহ জেলার কালিগঞ্জ মাগুরা জেলার শালিখা ও নড়াইল জেলার ভেতর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে কালিয়া উপজেলার পেড়োলির কাছে নবগঙ্গা নদীতে গিয়ে মিশেছে। পরে বিভিন্ন নামধারণ করে নদীটি বঙ্গোপসাগরে মিলিত হয়েছে। এখন চিত্রানদী কেন্দ্র করে কালিগঞ্জ, চাপরাইল, সীমাখালি, নারকেলবাড়ীয়া শরশুনা বুনাগাতী, পুলুম গড়ের হাট মাইজ পাড়া, শাহবাদ, নড়াইল, গোবরা ও মির্জাপুর সহ বড় বড় প্রসিদ্ধ ব্যবসাকেন্দ্র গড়ে উঠেছিল। সে সময় চিত্রানদী স্রোতে ভাসত কার্গো, জাহাজ, যাত্রীরা নৌ-পথে দূর-দূরান্তে যাবার জন্য ঐসব হাট-বাজারের বন্দরে অপেক্ষায় থাকত। নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হতো। সময়ের বিবর্তনে এখন তা শুধু স্মৃতি।
১৯৭৪ সালে প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারত বাংলাদেশের উজানে পদ্মা নদীর উপর মরণ বাঁধ ফারাক্কা দিয়ে পানি প্রবাহের যথারীতি গতিরোধ করে দেয়। ফলে দেশের অন্যান্য নদীর মত এর বিরূপ প্রত্রিক্রিয়া পড়ে একদিনের খরশ্রোতা নদী চিত্রার উপর। এ কারণে চিত্রা ভরা বর্ষা মওসুমে ও পানিশূন্য।
নবগঙ্গা নদী
চুয়াডাঙ্গার কাছ থেকে পূর্বদিকে প্রবাহিত হওয়ার পর মাগওরাতে কুমার ও নড়াইলের চিত্রা নদীর জলধারাসহ এটি দক্ষিণ দিকে প্রবাহিত হয়ে ভৈরব নদীতে পড়েছে। পূর্বে ইছামতির শাখা নদী ছিল, কিন্তু উৎসমুখ ভরাট হয়ে যাওয়ায় বর্তমানে ভৈরব নদীর একটি উপনদীতে পরিণত হয়েছে। নদীটি নাব্য ও জোয়ার-ভাটা দ্বারা প্রভাবিত।চুয়াডাঙ্গা এবং ঝিনাইদহ জেলা অতিক্রম করে মাগুরা জেলার কাছে কুমারের সাথে মিশেছে নবগঙ্গা। এখান থেকে নবগঙ্গা কুমার নদীর পানিতে সঞ্জীবিত হয়। বস্তুত মাগুরার পরবর্তী নবগঙ্গা কুমার নদীরই বর্ধিতরূপ। গড়াই-মধুমতির বর্তমান মূল স্রোতধারার অধিকাংশই নড়াইল জেলার বড়দিয়াতে নবগঙ্গা দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। নদীটির মোট দৈর্ঘ্য ২৩০ কিমি। নবগঙ্গার যাত্রাপথ আঁকাবাঁকা, তবে নদীটি ভাঙনপ্রবণ নয়। চুয়াডাঙ্গা থেকে মাগুরা পর্যন্ত নদীটি অনাব্য এবং জলজ উদ্ভিদে সমাকীর্ণ। এই এলাকায় বর্ষাকালে দুই-তিন মাস নৌযান চলাচল সম্ভব। তবে মাগুরার নিম্নাঞ্চল থেকে সারা বছরই নাব্য। মাগুরা পর্যন্ত নদীটির গড় প্রশস্ততা ২০০ মিটার এবং পরবর্তী অংশের গড় প্রস্থ ৩০০ মিটার। মাগুরা পরবর্তী ভাটি অংশে জোয়ার-ভাটার গড় পরিসর ১ মিটার।নদী তীরবর্তী গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোর মধ্যে চুয়াডাঙ্গা, ঝিনাইদহ, মাগুরা, বিনোদপুর, সত্রাজিৎপুর, নওহাটা, সিঙ্গিয়া, নলদি ব্রাহ্মণডাঙ্গা, রায়গ্রাম, কলাগাছিয়া, এড়েন্দা, লক্ষ্মীপাশা, লোহাগড়া, কুমারকান্দা, কামঠানা, তেঁতুলিয়া, কালনা, বড়দিয়া, গাজীরহাট। সম্ভবত মোগল শাসনামলে নবগঙ্গা নদীর একটি শাখা মল্লিকপুর, কোলা, দিঘলিয়া, তেলিপাড়া হয়ে কালিয়া থানায় প্রবাহিত হতো
পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে: মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, এটুআই, বিসিসি, ডিওআইসিটি ও বেসিস